সাইফুর রহমান শামীম,,কুড়িগ্রাম ঃ
কুড়িগ্রামে আশিক হত্যা মামলায় জেলার মূলধারার তিনজন সাংবাদিককে জড়িয়ে কুড়িগ্রাম সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ঘটনার সাথে জড়িত সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগ উল্লেখ করা না হলেও আসামীদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এনিয়ে সাংবাদিক মহলে অসন্তোষ বিরাজ করছে। সুধি সমাজে দেখা দিয়েছে বিরুপ প্রতিক্রিয়া। তারা মনে করেন এই হত্যা মামলায় সাংবাদিকদের আসামি করা হয়েছে উদ্দেশ্য প্রনোদিত এবং চক্রান্ত মুলক ।
গত ১০ অক্টোবর দায়েরকৃত মামলার অভিযোগে ৪০নং ক্রমিকে ইনডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশন ও দৈনিক কালের কন্ঠের প্রতিনিধি এবং কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল খালেক ফারুক, ৪২নং ক্রমিকে দৈনিক সংবাদ ও নিউজ২৪ টেলিভিশনের প্রতিনিধি হুমায়ুন কবির সূর্য এবং ৬৪নং ক্রমিকে এটিএন বাংলা ও এটিএন নিউজ টেলিভিশনের প্রতিনিধি ইউসুফ আলমগীরকে আসামী করা হয়েছে।
টিআইবি’র অনুপ্রেরণায় গঠিত কুড়িগ্রাম সনাক এর সভাপতি অ্যাডভোকেট আহসান হাবীব নীলু বলেন, এই তিন মিডিয়াকর্মী টিআইবি’র অনুপ্রেরণায় গঠিত সচেতন নাগরিক কমিটির কুড়িগ্রামের সদস্য। তারা দীর্ঘদিন ধরে গণতন্ত্র ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই,সকল বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। ঘটনার দিন তারাসহ অধিকাংশ সাংবাদিক তৎকালীন সরকারী দলের হুমকি ধামকির রোষানলে পড়েছিলো। সংবাদ সংগ্রহের কাজে এসে তারা ছাত্রলীগের ক্যাডার বাহিনীর দ্বারা সকাল সাড়ে ৯টা থেকে অবরুদ্ধ ছিলো প্রেসক্লাব ও ঘোষপাড়াস্থ কুড়িগ্রাম চক্ষু হাসপাতালে। পুলিশ ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সহায়তায় দুপুর একটার দিকে তাদের উদ্ধার করা হয়। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনের সমর্থনে রাষ্ট্র সংস্কারের দাবিতে প্রেসক্লাবের সামনে সনাকের (টিআইবি) মানববন্ধন কর্মসূচি ছিলো। সে জন্য তারা আগে থেকেই উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু সরকার দলের বাধার মুখে সে কর্মসূচি পালিত হয়নি। তারা বরাবরই বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের পাশে ছিলেন। শুধু তাই নয় তাদের সন্তানরাও সেই আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। তাদের আনা-নেওয়ার কাজটিও অভিভাবক হিসাবে করেন। প্রকৃত সত্যকে আড়াল করতে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। তিনজনই রাজনৈতিক ভাবে নিরপেক্ষ,উদ্যমী, সৎ ও নিষ্ঠাবান সাংবাদিক হিসেবে জেলায় পরিচিত। কুড়িগ্রাম সনাকের পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। একই সঙ্গে সাংবাদিক হয়রাণীবন্ধে সরকারকে কার্য়করী পদক্ষে নেয়ার আহ্বান জানান তিনি।
এই বিষয়ে কুড়িগ্রাম সভাপতি রাজু মোস্তফিজ বলেন, প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল খালেক ফারুকসহ বেশ কয়েকজন সাংবাদিক ও ক্যামেরাপার্সনরা কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবে অবরুদ্ধ ছিলেন গত ৪আগষ্ট আন্দোলন চলাকালীন সময়ে । কাজেই হামলার ঘটনার সাথে সাংবাদিকদের সম্পৃক্ততা কল্পনাপ্রসূত এবং সৃজিত বটে। পেশাগত দায়িত্ব পালন কালে নিহত আশিক দাফনের সংবাদ সংগ্রহ ও প্রচারও করেছেন তারা। অভিযুক্ত সাংবাদিকরা কোন রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত নয়। তারা নিরপেক্ষ ভাবে তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করে আসছে গত ২ যুগ করে।
কুড়িগ্রাম বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক কেএম নাজমুস সাকিব শাহী বলেন, আন্দোলনের শুরু থেকে আমরা যারা জড়িত ছিলাম এবং নেতৃত্বে ছিলাম তারা ছোট বড়ো সবাইকে চিনি ও জানি। কিন্তু আশিক ভাইয়ের মৃত্যু নিয়ে মামলা দায়ের করা ছাত্র রুহুল আমিনকে ব্যক্তিগতভাবে আমি চিনি না। মামলার আগে তার নামও শুনিনি। অন্যদিকে মামলার আসামি করা তিন সাংবাদিকই আমাদের আন্দোলনে সমর্থন দিয়ে আসছিলেন। বিশেষ করে হুমায়ুন কবির সূর্য আংকেলের ছেলে মেয়ে দুজনই আমাদের সাথে আন্দোলনে ওতোপ্রোতভাবে জড়িত ছিল। আংকেল তার ছেলেমেয়েকে আমাদের কাছে নিজে পৌঁছে দিতেন এবং নিয়ে যেতেন। কাজেই এধরণের ব্যক্তিবর্গকে কোনো কারণ ছাড়াই এ ধরণের মামলায় জড়ানো কোনোভাবে সমর্থন করি না। এটাও বৈষম্য এবং পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারে পেতাত্তার স্বৈরাচারী আচরণ। এ রকম হয়রাণী, মিথ্যা মামলা, হামলা সর্বপরি অরাজকতা আমরা বর্দাস্ত করবো না।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর সভাপতি খাইরুল আনম দাবী করেন, হয়রাণী করতেই সাংবাদিকদের এ মামলায় আসামী করা হয়েছে। হুমায়ূন কবির সুজন কুড়িগ্রাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক। সুজন সরকারে বিরুদ্ধে সুশান প্রতিষ্ঠা, গণতন্ত্র, ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠায় সব সময় ছিলো সোচ্চার। বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সময় কুড়িগ্রাম সুজন তার নেতৃত্বে একাধিক কর্মসুচি পালন করে।
কুড়িগ্রাম প্রবীণ হিতৈষী সংঘের সভাপতি এ কে এম সামিউল হক নান্টু বলেন, ‘নতুন বাংলাদেশ’ বিনির্মানে সাংবাদিকদের জড়িয়ে মিথ্যা মামলা দুঃখজনক। এটা স্বাধীন সাংবাদিকতার অন্তরায়। প্রতিবাদী , নিরোপেক্ষ এবং এই সমাজের অত্যন্ত গ্রহণযোগ্য তিন সাংবাদিককে মামলায় জড়িত করার ঘটনায় তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
এই বিষয়ে মামলার বাদী রহুল আমিন মামলা করার কথা স্বীকার করে বলেন, ১০৪জন আওয়ামীলীগের নেতা কর্মীদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলার অভিযোগ দায়ের করেছি। সাংবাদিককে আসামী করার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি নামাজে যাচ্ছি। আল্লাহ যে ভাবে ফয়সালা করবেন তাতেই আমি খুশি বলে ফোন কেটে দেন। এর পর থেকে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
কুড়িগ্রাম সদর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাজমুল আলম বলেন,আশিক হত্যার ঘটনায় থানায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে। সেখানে এজাহার নামীয় ১০৪জনের নাম উল্লেখ রয়েছে। মামলাটি তদন্তাধীন রয়েছে। ইতি মধ্যে পুলিশ এজাহার ভুক্ত ৭নং আসামী আব্দুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে শুক্রবার কুড়িগ্রাম চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করেছে।
Leave a Reply